লেনার্ড কোহেন-এর চারটি
এই কি তুমি চাও…
তুমি ছিলে প্রতিশ্রুতি ভোরের,
আমি ছিলাম পরের দিনের সকাল।
তুমি ছিলে যিশুখ্রিস্ট, প্রভু,
আমি নেহাত টাকাই ধার দিতাম।
তুমি ছিলে অনুভবময়ী সিদ্ধা
আমি ছিলাম খুব-শ্রদ্ধেয় ফ্রয়েড।
তুমি ছিলে মানুষী রাগমোচন
আমি ছিলাম নোংরা ছেলে, পথের।
এই কি তুমি চাও
তোমার-আমার প্রেততাড়িত
বিশ্রী বাড়িতে থাকতে?
এই কি তুমি চাও…
মার্লন ব্র্যান্ডো ছিলে তুমি
স্টিভ ম্যাকুইন, বরাবরই সে আমি
তুমি ছিলে কে-ওয়াই নামের জেলি
আমি ছিলাম ভেসলিন, ঐ পাতি।
আধুনিক যত ওষুধপত্রের বাবা ছিলে তুমি
পরিচ্ছন্ন বলে খ্যাতিই ছিল আমার।
বেশ্যা ছিলে তুমি, ব্যাবিলনের জন্তু,
আমি বাজাই রিন টিন টিন টিনার।
এই কি তুমি চাও…
অহো, এই কি তুমি চাও…
তুমি হয়ে গেলে বুড়ি,
সতেরো ছেড়ে মোটে এগোলামই না আমি
কত জনের পেছনে ওগো, ঘুরে মরলে তুমি,
আমি থেকে গেলাম বরাবর সেই একই
নিঃসঙ্গতাকে উড়িয়ে দিলে তুমি,
আমি এতদিন উজিয়ে এলাম একাই
তুমি বললে, ভালোবাসতে পারবে না তুমি, হায়
আমি খুলে ফেললাম তোমার যত পোশাক।
আর এই কি তুমি চাও…
আর এই কি তুমি চাও…
আর এই কি তুমি চাও
বলতে চাইছি, এই কি তুমি চাও
ঠিক, এই-ই তুমি চাও…
… … …
তার ড্রেসিং টেবিলে কবীরের কবিতা দেখে
সুগন্ধি সাবান
আর একটুখানি কবীর
আরও শতেক হাজার
আর একটুখানি কবীর
নতুন একটা পাথরের বাড়ি, আর সাঁতারের জল
তর্কযুদ্ধ, ঋণ, আর পরিচর্যা মুখের
এবং এখানে কবীরের প্রেমের দোলা
আর এখানে তাঁর মৃত্যুর কুঠুরি
কবীর, তুমি এক বৃদ্ধ হামবড়াই
সব্বাইকে ঘুম পাড়িয়েছ তুমি
… … …
আমাকে তোমার ভালবাসার দরকার নেই কোন
আমাকে তোমার ভালবাসার দরকার নেই কোন
শুধু এই জন্য যে
তুমি হচ্ছ সেই সমস্ত নারী
যাদের আমি কামনা করেছি
প্রতি রাত্রে
তোমাকে অনুসরণ করার জন্যই আমি জন্মেছি
এদিকে আমি এখনও সেই সমস্ত পুরুষ
যারা ভালবাসে তোমায়
একটা টেবিলের পাশে তোমার সঙ্গে দেখা
আমার দু-হাতে তুলে নিলাম তোমার হাতের মুঠি
নির্জন ট্যাক্সির মধ্যে
জেগে উঠলাম একা
তোমার অনুপস্থিতিতে আমার হাত তখন
নিয়মনিষ্ঠ অতিথিশালা
তোমার জন্যই এই সমস্ত গান আমি লিখেছি
নারী ও পুরুষের গড়নে তৈরি
লাল ও কালো ঢের মোম আমি পুড়িয়েছি
চন্দনকাঠের দুটি পিরামিডের
ধোঁয়াকে আমি বিবাহ করেছি
প্রার্থনা করেছি
প্রার্থনা করেছি যেন তুমি আমায় ভালবাসো
যেন তুমি আমায় না-বাসো
… … …
মুহূর্তের জন্য পেয়েছিলাম
মুহূর্তের জন্য পেয়েছিলাম আমি
জানি কেন তোমায় ধন্যবাদ দেওয়া আমার দরকার
কালো পোশাকে ক্ষমতাধারী শাসকদের আমি দেখেছি
দেখেছি যুবতী মেয়েদের বুকে
তাদের নগ্ন হতে
মেয়েদের চেয়ে লোকগুলো যেন বেশি উলঙ্গ
নিঃশব্দে তারা কাঁদছিল
না, এসব নয়
কেন যে তোমায় ধন্যবাদ দেব ভুলে যাচ্ছি ফের
যার মানে শুদ্ধ আকাঙ্ক্ষা ছাড়া আর কিছুই নেই আমার
বয়স তোমার কত
তোমার ঊরুগুলো পছন্দ হয় তো তোমার
মুহূর্তের জন্য যা পেয়েছিলাম আমি
তোমার মুখগহ্বরের ছবি ধ্বংস করে দিক
আমার কথকতা— চাওয়ার পেছনে কারণ ছিল আমার
রেডিওয় কী যেন সব হচ্ছে
মেক্সিকান কোন গানের শেষ
দেখি পয়সাকড়ি দেওয়া হচ্ছে গায়কদেরও
তারাও তেমন আশ্চর্য নয়
জানে এ-ও একটা কাজ বৈ তো নয়
এতক্ষণে ভুলে গেছি আমি সব
অনেকেই মনে করে তুমি সুন্দর
এ নিয়ে কী মনে হয় আমার
সত্যি কিছু মনে হয় না আমার
তোমার সঙ্গে নিছক প্রেম না-করার
কারণ আছে আমার
খবরের কাগজের সঙ্গে তা যুক্ত
দেখেছি বড়-বড় দপ্তরের গোপন ব্যবস্থা সব
দেখেছি সেই সব লোকেদের যারা নিজেদের বিষয়মুখিতা খুব ভালবাসে
যদিও বিরাট টেলিস্কোপ দিয়ে
তারা দেখেছে
তবু তারা ভাবে তাদের বিষয়মুখিতা খুব জরুরি
শুধু শখ নয়, রুচি আর নিষ্পাপ ভনিতা মাত্র সার
তারা ভাবে এই ব্রহ্মাণ্ড শুনছে সব
সহসা ভয় পেল আমার
ওদের কোন অদ্ভুত নিয়ম
বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে আমাদের
ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আছি আমি
এতক্ষণে ডুবে যাচ্ছি অপমানের ঘোরে
কেন শুরু করেছিলাম সব ভুলে গেছি আমি
তোমার চোখ নিয়ে বলতে চেয়েছি বোধ হয়
কিছু জানি না তোমার চোখের বিষয়ে
কত সামান্য তুমিও তা নজর করেছ জানি
চাই কোথাও একটা নিরাপদে থাকো তুমি
বড়-বড় দপ্তর থেকে দূরে
পরে তোমায় পড়ব আমি আবার
কত লোক তোমার পাশে নিঃশব্দে কাঁদতে চায় যে একা
ভাষান্তর : সন্দীপন ভট্টাচার্য