সপ্তাহ জুড়ে অর্ডার-করা সমস্ত বইপত্তর একযোগে স্পিড পোস্ট করা হয় প্রত্যেক বৃহস্পতি ও শুক্রবার সকালে… ধন্যবাদ।
নতুন বছরে বইপত্তর-এর শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন, পাঠক
জুল রেনার : “কয়েক টুকরো ছেঁড়া মেঘ” থেকে নির্বাচিত অংশ
উদ্ধত, গম্ভীর মুখ দেখে ঠকবেন না— এই মুখগুলিই ভীরু।
চিন্তার খুচরো ভাঙানি হল শব্দ। এক-একজন কথক আমাদের দেন সিকি আধুলি। আবার কেউ-কেউ দেন শুধুই স্বর্ণমুদ্রা।
পণ্ডিত সাধারণীকরণ করেন, শিল্পী চিহ্নিত করেন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য দিয়ে।
বাস্তববাদ! বাস্তববাদ! আমাকে একটি উৎকৃষ্ট বাস্তব দিন যা অনুসরণ করে নিজেকে গড়ে তুলতে পারি।
শৈলীর অর্থ যাবতীয় শৈলী ভুলে যাওয়া।
সমালোচক উদ্ভিদ্বিজ্ঞানী, আমি উদ্যানপালক।
কখনও সন্তুষ্ট হলে চলবে না : যাবতীয় শিল্প নিহিত এখানেই।
চাষি হল চলমান গাছের গুঁড়ি।
প্রতিদিনের বরাদ্দ পৃষ্ঠাটা লেখা চাই : কিন্তু যদি মনে হয় লেখাটা খারাপ হচ্ছে, থেমে যেতে হবে সঙ্গে-সঙ্গে। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। একটা দিন নষ্ট হল ঠিকই, কিন্তু খারাপ কিছু করার থেকে কিছু না করা ভালো।
আমি এমন এক বাস্তববাদী যে বিব্রত বাস্তবে।
যাবতীয় দেশপ্রেমের মূল রয়েছে যুদ্ধে : তাই আমি দেশপ্রেমিক নই।
যেদিন থেকে কৃষককে চিনেছি, প্রকৃতি-বিষয়ক যে-কোন রচনা, তা যদি নিজেরও হয়, মনে হয়েছে মিথ্যা।
আঃ! যত্ত-সব পুরনো আবর্জনা! পুরনো চিঠিপত্র, পুরনো জামা-কাপড়, পুরনো টুকিটাকি জিনিস যা ফেলে দিতে চায় না কেউ। ব্যাপারটা কী সুন্দর ভাবে বুঝেছে প্রকৃতি, আর তাই প্রতি বছর সে অতি অবশ্যই মোচন করে পুরনো পাতা, ফুল ফল শাকসবজি, এবং পুরনো বছরের স্মৃতিচিহ্ন দিয়ে প্রস্তুত করে জমির সার।
সমাজতন্ত্রীগণ, আপনাদের সঙ্গে আমার সহমত হওয়া আর হয়ে উঠবে না। আপনারা চান আরও অর্থবান হতে, আমি দরিদ্রতর হতে বদ্ধপরিকর। আমার আগে আপনারা গন্তব্যে পৌঁছবেন।
সমাজতন্ত্রীদের প্রতি : “হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা ভাগাভাগি করব! কিন্তু সেই সঙ্গে আনুগত্য, ভদ্রতা ও সরসতাও ভাগাভাগি করা উচিত!”
আলস্য! আহা! এ বিষয়ে আমাকে একটি বই লিখতে হবে! যে-মূর্খ নিজের মূর্খামি বুঝতে পারে তাকে ঠিক মূর্খ বলা চলে না আর; কিন্তু অলস ব্যক্তি নিজের আলস্য সম্পর্কে সজাগ থাকে, তা নিয়ে শোকসন্তপ্ত হয়, এবং অলস-ই থেকে যায়।
আলস্য নিষ্ফলা, এমন ভাবা উচিত নয়। এর মধ্যে নিবিড় ভাবে বাঁচা যায়, কানখাড়া খরগোশের মতো। জলে সাঁতার কাটার মতো এরও মধ্যে কাটা যায় সাঁতার; গায়ে ছুঁয়ে যায় আত্মভৎসনার তৃণগুচ্ছ।
যে-শব্দটি সর্বাধিক সত্য, সর্বাধিক সুনির্দিষ্ট, সর্বাধিক বোধযুক্ত, তার নাম ‘শূন্য’।
আমার স্মৃতিশক্তি অসাধারণ : সবই ভুলে যাই! ব্যাপারটা চমৎকার সুবিধাজনক। যেন জগৎ আমার কাছে পুনর্নবীকৃত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সূত্র :
বইপত্তর-প্রকাশিত শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায়ের তরজমায় “জুল রেনার : কয়েক টুকরো ছেঁড়া মেঘ নির্বাচিত দিনলিপি” থেকে সংকলিত কিছু অংশ।
(এখানে প্রকাশিত লেখাপত্র শুধুই পড়ার জন্য। দয়া করে এর কোন অংশ কোথাও পুনর্মুদ্রণ করবেন না। ইচ্ছে করলে লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন, কিন্তু অনুরোধ, গোটা লেখাটি কখনওই অন্য কোন ওয়েবসাইটে বা কোন সোশ্যাল নেটওয়রকিং সাইটে শেয়ার করবেন না। ধন্যবাদ।)
ভলতের : “নিজের বাগান চাষ” থেকে নির্বাচিত কিছু অংশ
যারা নিজেদের ভগবান বানিয়ে তুলতে চায়, তারা চিরকালের মতো নিপাত যাক।
ধর্ম নিয়ন্ত্রক নয়, সে উৎসাহিত করে অপরাধকে। প্রতিটি ধর্মই প্রায়শ্চিত্তকরণের ওপর স্থাপিত।
আমাদের ধর্ম আবশ্যক, কিন্তু পুরোহিতে বিশ্বাস আবশ্যিক নয়। ঠিক যে-ভাবে স্বাস্থ্যবিধিসম্মত খাদ্য আবশ্যক, কিন্তু চিকিৎসকে বিশ্বাস আবশ্যিক নয়।
ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে ধর্ম হল বিবেক-সংক্রান্ত বিষয়, রাজা ও প্রজার মধ্যে তা প্রশাসনিক বিষয়, আর দুটি ব্যক্তির মধ্যে তা ধর্মান্ধতা বা প্রবঞ্চনার বিষয়।
নির্বোধেরা খ্যাতিমান লেখকের সব রচনারই প্রশংসা করে।
রাজনীতির খুঁটিনাটি আর কলকাঠি একদিন বিলীন হয় বিস্মৃতি-সাগরে। কিন্তু পাকা আইন, বুনিয়াদি প্রতিষ্ঠান এবং বিজ্ঞান ও শিল্পকলায় সাফল্য থেকে যায় চিরকাল।
সমাজে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তির ভূমিকা ঠিক সেটাই যা সেনাবাহিনীতে কাপুরুষের, উভয়ই আপন আতঙ্কপীড়া দ্বারা বাকি সবাইকে সংক্রমিত করে।
যত কম অন্ধবিশ্বাস, তত কম বাদানুবাদ; যত কম বাদানুবাদ, তত কম দুর্ভাগ্য: এ কথা যদি সত্য না হয়, তবে আমরাই ভুল।
কুসংস্কারের সঙ্গে ধর্মান্ধতার সম্পর্ক ঠিক সেরকম, যেরকম জ্বরের সঙ্গে প্রলাপের, আর ক্রোধের সঙ্গে উন্মত্ততার।
ধর্মান্ধতা একবার যদি মগজে পৌঁছয়, তবে সে-ব্যাধি দুরারোগ্য।
দর্শনশাস্ত্রের প্রভাবে চিত্ত প্রশান্ত হয়, এবং ধর্মান্ধতা ও প্রশান্তির সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়।
আত্মিক অতিমারীর মোকাবিলায় আইন ও ধর্ম যথেষ্ট নয়। বিশেষত ধর্ম, উপযুক্ত পুষ্টি জোগানোর পরিবর্তে, ব্যাধিগ্রস্ত মনকে আরও বিষিয়ে তোলে।
কাকাঁবো জিজ্ঞেস করে, “আশাবাদ কী?” কাঁদিদ-এর জবাব, “হায়! নিজের দুর্দশা সত্ত্বেও সব কিছু যে ঠিকঠাক চলছে জগৎসংসারে— এই ধারণার বাতিকই আশাবাদ।”
কতই-না মধুর হত সে-জীবন যদি তা কাটানো যেত ঈর্ষাহীন জনাকয়েক প্রতিভাবান জ্ঞানীর সঙ্গে।
সত্যের কোন দলীয় নাম নেই।
কখনওই ধরে নেবেন না যে অর্থ সব কিছু করতে পারে, নয়তো শেষমেশ আপনাকেই অর্থের জন্য সব কিছু করতে হবে।
টাকাপয়সার প্রশ্নে সকলেরই ধর্ম অভিন্ন।
ইচ্ছাকৃত মিথ্যাভাষণ ছাড়া রাজনীতি আর কী-ই বা?
সাধারণ ভাবে সরকার পরিচালনার কৌশল হল জনগণের এক অংশের থেকে অর্থ লুটে আর-এক অংশকে দেওয়া।
‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা’ কথাটি সম্পর্কে সাবধান, কারণ এটি শোষকেরা বলে আসছে চিরকাল।
কোলাব্যাঙের কাছে সৌন্দর্য কী? এমন এক ব্যাঙনি যার চোখ-দুটি ঠিকরে বেরোচ্ছে, মুখ ইয়া চওড়া, পেটটা হলদে, আর পিঠভরতি ফুটকি।
দর্পণ এক মূল্যহীন উদ্ভাবন। নিজেকে ঠিকঠাক দেখতে হলে অন্যের চোখে আপনার প্রতিফলন দেখুন।
সূত্র :
বইপত্তর-প্রকাশিত শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায়ের তরজমায় “ভলতের : নিজের বাগান চাষ অনুচিন্তন ও কথিকা” থেকে নির্বাচিত কিছু অংশ।
(এখানে প্রকাশিত লেখাপত্র শুধুই পড়ার জন্য। দয়া করে এর কোন অংশ কোথাও পুনর্মুদ্রণ করবেন না। ইচ্ছে করলে লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন, কিন্তু অনুরোধ, গোটা লেখাটি কখনওই অন্য কোন ওয়েবসাইটে বা কোন সোশ্যাল নেটওয়রকিং সাইটে শেয়ার করবেন না। ধন্যবাদ।)
এখন ‘বইপত্তর’ থেকে বই কেনায় বাড়তি কোন খরচ নেই : Welcome to boipattor.in : the shipping-free online bookstore with an art shop
এখন
‘বইপত্তর’ থেকে বই কেনায় বাড়তি কোন খরচ নেই।
‘বইপত্তর’ থেকে বই কিনলে বইয়ের মূল্য ছাড়া বাড়তি কোন টাকা দিতে হয় না।
‘বইপত্তর’ থেকে গোটা দেশে এখন বই যায়, পাঠককে তার জন্য কোন ডাকখরচ বহন করতে হয় না।
‘বইপত্তর’ থেকে যে-কোন বই কিনুন— নতুন বই, পুরনো বই, অন্য প্রকাশকের বই— পৌঁছে যাবে আপনার বাড়ির দোরগোড়ায়। এবং এর জন্য বইয়ের দাম ছাড়া আপনাকে আর একটি টাকাও দিতে হবে না।
welcome to boipattor.in : the shipping-free online bookstore with an art shop
ডারউইনের প্রশ্ন ও অন্যান্য : এদুয়ার্দো গালেয়ানো
ডারউইনের সমুদ্রযাত্রা
তরুণ চার্লস ডারউইন জানতেন না তাঁর জীবন নিয়ে কী করবেন। তাঁর বাবা তাঁকে উৎসাহিত করেন :
“তুমি নিজের আর তোমার পরিবারের সকলের কাছে অসম্মানের কারণ হবে।”
১৮৩১-এর শেষে, তিনি বেরিয়ে পড়লেন।
পাঁচ বছর ধরে দক্ষিণ আমেরিকা, গালাপাগোস ও দূরদূরান্তের সব জায়গায় ভ্রমণের পর তিনি লন্ডনে ফেরেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন তিনটে বিশাল কচ্ছপ, যার একটা ২০০৭-এ অস্ট্রেলিয়ার এক চিড়িয়াখানায় মারা যায়।
অন্য মানুষ হয়ে ফিরে আসেন তিনি। এমনকী তার বাবাও তা লক্ষ করেন :
“ওর মাথার আকৃতিটা যেন বদলে গেছে!”
কচ্ছপের চেয়ে বেশি কিছু নিয়ে ফিরেছিলেন তিনি। নিয়ে এসেছিলেন প্রশ্ন। প্রশ্নে ভরে উঠেছিল তাঁর মাথা।
ডারউইনের প্রশ্ন
পশমি ম্যামথের গায়ে মোটা ত্বক থাকে কেন? ম্যামথ কি কোন ভাবে হাতি হতে পারে যে বরফ যুগ শুরুর সময়ে এই ভাবে উষ্ণ থাকার উপায় খুঁজে পায়?
জিরাফের ঘাড় এত লম্বা কেন? এমন কি হতে পারে যে সময়ের পথ ধরে গাছের মগডালের ফল পাড়ার জন্য তা ক্রমেই লম্বা হয়ে উঠেছে?
বরফের দেশে খরগোশ কি সব সময়ে শাদাই ছিল, নাকি শিয়ালকে বোকা বানানোর জন্য তারা ক্রমে শাদা হয়ে উঠেছে?
ফিঞ্চের চঞ্চু বাসস্থান সাপেক্ষে এমন আলাদা হয় কেন? এমন কি হতে পারে যে দীর্ঘ বিবর্তন প্রক্রিয়ায় ধীরে-ধীরে পরিবেশের সঙ্গে তা খাপ খাইয়ে নিয়েছে, যাতে তারা ফলের আবরণ ভাঙতে, শূককীট ধরতে আর ফুলের রস পান করতে পারে?
অর্কিডের অবিশ্বাস্য দীর্ঘ গর্ভকেশর কি এমন ইঙ্গিত দেয় যে কাছাকাছি তা হলে এমন প্রজাপতি রয়েছে যাদের জিহ্বা তাদের জন্য অপেক্ষমান গর্ভকেশরের মতোই দীর্ঘ?
কোন সন্দেহ নেই যে এইরকম হাজার-একটা প্রশ্ন সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে বহু সংশয় ও দ্বন্দ্ব পেরিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভব এবং পৃথিবীতে জীবের বিবর্তন নিয়ে তাঁর বিস্ফোরক বইয়ে লিখিত পৃষ্ঠায় পরিণত হয়।
ঈশ্বরবিরোধী ধারণা, অবমাননার অসহনীয় পাঠ : ডারউইন প্রতিভাত করেন যে ঈশ্বর মোটেই সাত দিনে পৃথিবী সৃষ্টি
করেননি, তাঁর অবয়ব ও প্রতিরূপেও আমাদের তৈরি করেননি।
এরকম ভয়াবহ সংবাদ খুব ভালো ভাবে গৃহীত হয়নি। কে এই লোকটাকে এ কথা ভাবার সাহস দিয়েছে যে বাইবেলের
সে সংশোধন করতে পারে?
অক্সফোর্ডের বিশপ স্যামুয়েল উইলবারফোর্স ডারউইনের পাঠকদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন :
“বনমানুষ থেকে যে তোমরা এসেছ, সে কি ঠাকুরদার দিক থেকে, নাকি ঠাকুমার?”
আমি তোমাকে বিশ্ব দেখাব
ডারউইন জেমস কোলম্যানের ভ্রমণ সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে উদ্ধৃত করতে পছন্দ করতেন।
ভারত মহাসাগরের যাবতীয় জীবিত প্রাণী,
জ্বলন্ত ভিসুভিয়াসের ঊর্ধ্বাকাশ,
আরব্য রজনীর দীপ্তি,
জাঞ্জিবারের উত্তাপের বর্ণ,
সিংহলের বাতাস, যাতে ভাসে দারুচিনির সুবাস,
এডিনবার্গে শীতেকালের ছায়া,
আর রুশ কারাগারের ধূসরতার
এত ভালো বর্ণনা আর কেউ দেননি।
হাতে শাদা বেতের ছড়ি নিয়ে, কোলম্যান গোটা বিশ্বের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঘুরে বেড়িয়েছেন।
এই ভূপর্যটক, যিনি আমাদের দেখতে সাহায্য করেছেন, ছিলেন অন্ধ।
“আমি আমার পা দিয়ে দেখি,” বলেছিলেন তিনি।
একমাত্র মানুষ
ডারউইন আমাদের বলেছিলেন, আমরা বনমানুষের আত্মীয়, দেবদূতদের নই। পরে, আমরা জানলাম যে আমরা এসেছি আফ্রিকার জঙ্গল থেকে, মোটেই কোন সারস আমাদের প্যারিস থেকে বয়ে আনেনি। এবং খুব বেশিদিন আগে নয় যখন আমরা আবিষ্কার করি যে আমাদের সব জিন বা বংশাণু অনেকটাই ইঁদুরের সমগোত্রীয়।
এখন আর আমরা বলতে পারি না যে আমরা ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ-তম সৃষ্টি, নাকি শয়তানের বাজে কৌতুক। আমরা পুঁচকে মানুষ :
সব কিছু ধ্বংস করি,
নিজেরাই নিজেদের শিকার করি,
পরমাণু বোমা, হাইড্রোজেন বোমা বানিয়েছি আমরা, আর নিউট্রন বোমা, যা সমস্ত বোমার মধ্যে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর, কারণ তা মানুষকে বাষ্পে পরিণত করে, কিন্তু অন্যান্য বস্তু অক্ষত থাকে,
আমরাই একমাত্র প্রাণী যারা যন্ত্র তৈরি করেছি,
আর আমরাই একমাত্র যারা উদ্ভাবিত যন্ত্রের দাস হয়ে বাঁচি,
আমরাই একমাত্র যারা নিজেদেরই ঘরবাড়ি গ্রাস করি,
আমরাই একমাত্র যারা যে-জল আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করে, যে-ভূমি আমাদের খাদ্যের যোগান দেয়, তা বিষিয়ে দিই,
আমরাই একমাত্র যারা নিজেদের ভাড়া দিতে বা বিক্রি করতে পারি, আমাদেরই পাশের মানুষটিকে ভাড়া দিতে বা বিক্রি করে দিতে পারি,
আমরাই একমাত্র যারা স্রেফ মজা করার জন্য হত্যা করি,
নির্যাতন করি,
ধর্ষণ করি।
এবং আমরাই একমাত্র যারা হাসি,
দিবাস্বপ্ন দেখি,
যারা পোকার লালা থেকে রেশম তৈরি করি,
আমরাই একমাত্র যারা আবর্জনায় সৌন্দর্য খুঁজে পাই,
যারা রংধনু ছাড়িয়েও রং আবিষ্কার করি,
আমরাই একমাত্র যারা নতুন সংগীতে সারা বিশ্বের কণ্ঠস্বর সাজিয়ে তুলি,
এবং সৃষ্টি করি শব্দ যাতে বাস্তবতা বা স্মৃতি কখনও না
মৌন হয়।
এদুয়ার্দো গালেয়ানো : আ য় না আমাদের প্রায় সব্বার গপ্প
ভাষান্তর : নুসরাত জাহান সন্দীপন ভট্টাচার্য
(এখানে প্রকাশিত লেখাপত্র শুধুই পড়ার জন্য। দয়া করে এর কোন অংশ কোথাও পুনর্মুদ্রণ করবেন না। ইচ্ছে করলে লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন, কিন্তু অনুরোধ, গোটা লেখাটি কখনওই অন্য কোন ওয়েবসাইটে বা কোন সোশ্যাল নেটওয়রকিং সাইটে শেয়ার করবেন না। ধন্যবাদ।)
Introducing THE ONLINE ART SHOP
Introducing THE ONLINE ART SHOP www.boipattor.in
‘বইপত্তর’-এর ওয়েবসাইটে এবার চলে এল ‘ছবিপত্তর’-ও। ছবিপত্তর মানে একেবারে অরিজিনাল হাতে-আঁকা ছবি, আর ছবির প্রিন্ট, পোস্টার, আর সেই সঙ্গে সেরামিকস ও টেরাকোটার অরিজিনাল হাতে-গড়া মূর্তি বা ভাস্কর্য।
অর্থাৎ এবার ‘বইপত্তর’-এর সাইট থেকেই অনলাইনে এই সব ছবি এবং ভাস্কর্যও কেনা যাবে, এবং অনতিবিলম্বে তা সরকারি ডাকব্যবস্থার মাধ্যমে আপনার বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে।
এ সবের দামও থাকছে একেবারে সাধ্যের মধ্যে, ফলে ইচ্ছে করলেই নিজের চারপাশটা এবার আপনি একটু অন্যরকম, একটু সুদৃশ্য, একটু মনোরম করে তুলতে পারেন।
ক্লিক করুন এই লিঙ্কে : https://boipattor.in/product-category/art-shop/ এবং দেখুন এখনও পর্যন্ত আমরা আপনার জন্য কী-কী হাজির করতে পেরেছি। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, বলা বাহুল্য যে এই সংগ্রহ ক্রমে বাড়বে, নিয়মিত এখানে নতুন-নতুন কাজ যুক্ত হবে।
ফলে মাঝে-মাঝেই আপনাকে সাইটটা একটু কষ্ট করে খুলে দেখতে হবে, এবং তার জন্য নিজের মোবাইলে বইপত্তর-এর অ্যাপ-টা ইনস্টল করে নেওয়া ভালো এই লিঙ্ক থেকে : https://play.google.com/store/apps/details?id=com.os.boipattor.
শেষে একটা সমস্যার কথা। বিশেষত সেরামিক ও টেরাকোটা কাজ যেহেতু ভঙ্গুর প্রকৃতির, ফলে এমন হতে পারে যে নানাবিধ সতর্কতা সত্ত্বেও পথে তা ক্ষতিগ্রস্ত হল। তেমন হলে যেহেতু এই সব কাজ সব-ই অরিজিনাল, এর কোন কপি হয় না, ফলে একই জিনিশ আবার পাঠানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে, আপনি তার বদলে একই দামের অন্য কোন জিনিশ পছন্দ করতে পারেন, যা আমরা আপনাকে বিনা-খরচে ফের পাঠিয়ে দেব। অথবা আপনি টাকা ফেরত চাইতে পারেন। টাকা আমরা নিশ্চয়ই ফেরত দেব, কিন্তু তার জন্য ক্ষতির চেহারাটা আমাদের জানা দরকার, যাতে পরবর্তী কালে আমরা আরও সতর্ক হতে পারি। তাই প্যাকিং খোলার পর-পরই ক্ষতিগ্রস্ত জিনিশের কয়েকটা ছবি তুলে আমাদের মেল-এ পাঠান। তা দেখে সঙ্গে-সঙ্গেই আপনার প্রদত্ত পুরো টাকা আমরা ফেরত দিয়ে দেব। ধন্যবাদ।
এর পরও আপনি যদি চান, যা-যা সাইটে দেওয়া আছে, তার বাইরে আরও যে-অসংখ্য ছবি ও ভাস্কর্য আমাদের সংগ্রহে আছে তা দেখবেন, তবে চলে আসতে পারেন নির্দিষ্ট ঠিকানায়। এ জন্য আগেই যোগাযোগ করে নিন এই ফোন নম্বরে : 8420 929 111.
To install the app of Boipattor you may copy and use this link: [https://play.google.com/store/apps/details?id=com.os.boipattor] or you may click the link below
সুহৃদকুমার ভৌমিক : আর্য রহস্য
এই প্রবন্ধের প্রধান উদ্দেশ্য হল ভারতের প্রাচীনতম নরগোষ্ঠী কোল বা অস্ট্রো-এশিয়াটিক জাতির যে-সমস্ত জীবন্ত ভাষা রয়েছে, যেমন সাঁওতাল, মুণ্ডা, হো প্রভৃতি— সে-সমস্ত ভাষার সাহায্যে এবং আমাদের প্রচলিত ধারণাসমূহের সাহায্যে ‘আর্য’ শব্দটির ব্যাখ্যা। আজকের দিনের অধিকাংশ ভাষাবিজ্ঞানী পণ্ডিত অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গেই বলছেন যে, তামাম পৃথিবীতে যে-সমস্ত সংস্কৃত শব্দের অপব্যাখ্যা হয়েছে, তাদের মধ্যে ‘আর্য’ শব্দটি হল সর্বাধিক ভাগ্যহীন। এর পশ্চাতে কাজ করেছে পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও সাম্রাজ্যবাদী, লোলুপ বাসনাসিক্ত পণ্ডিতদের স্বেচ্ছাকৃত ভুল ব্যাখ্যা, যাকে ঘোরতর অপরাধই বলা যায়। Prof. Winfred P. Lehmann Historical Linguistics: An Introduction বইতে (পৃ. ১৯) বলেছেন, ‘অনেক লেখক প্রাচীন Indic ও Celtic লোকেদের পরিচয় দিতে গিয়ে ‘আর্য গোষ্ঠীভুক্ত’ শব্দটি প্রায়ই ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন এই নাম আর চলে না। এর পেছনে কাজ করেছে একটা রাজনৈতিক ফন্দি (“…this name is now in dispute because of a misuse of it for devious political purpose.”)। আর এ-যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমাজবিজ্ঞানী বহুভাষাবিদ্ ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত (স্বামী বিবেকানন্দের ভ্রাতা) তাঁর Studies in Indian Social Polity নামে সুবিশাল গ্রন্থে (যার মূল বিষয় ৩ খণ্ডে ভারতীয় সমাজ পদ্ধতি নামক বাঙলা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়েছে) ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একই কথা বলেছেন যে, আর্য বিষয়ক মিথ্যা ইতিহাস বা myth সৃষ্টির প্রধান কারণই হল য়ুরোপীয় জাতি ও নেশন-গুলির আগ্রাসী রাজনৈতিক আধিপত্যের অপচেষ্টা।
এই অপব্যাখ্যার জনক হলেন ফ্রিডরিশ মাক্স মূলর। এশিয়াটিক সোসাইটি-র স্রষ্টা স্যার উইলিয়ম জোনস দেখেছিলেন, সংস্কৃত ভাষা এক আশ্চর্য শক্তিশালী ভাষা, এর মূল শব্দে (root word) প্রত্যয় ও উপসর্গের ব্যবহারে বিচিত্র শব্দের জন্ম হয়, যার দৃঢ়তার কাছে য়ুরোপীয় গ্রিক, ল্যাটিন বা ইংরাজি, কেউই দাঁড়াতে পারে না। (“The Sanskrit language, whatever be its antiquity, is of a wonderful structure, more perfect than the Greek, more copious than the Latin and more exquisitely refined than either, yet bearing to both of them a stronger affinity both in the roots of verbs and in the forms of grammar, …than could possibly have been produced by accident; so strong indeed, that no philologer could examine all three without believing than to have sprung from some common source, which perhaps, no longer exists.”)।
তখন ভারতের ভাগ্যবিধাতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সম্ভবত এই চিন্তা ছিল যে, ভারতবাসীর মনে দাস মনোভাব বা হীনতাবোধ সৃষ্টি করাই হবে স্থায়ী রাজ্যশাসনের প্রধান হাতিয়ার, তাই সংস্কৃতকে কত কম মর্যাদা দেওয়া যায় তা তারা ভেবেছিল। সৃষ্টি হয়েছিল এক কাল্পনিক ‘আর্য’ জাতি, যারা নাকি ভেড়া চরাতে-চরাতে য়ুরোপ থেকে এখানে এসে সংস্কৃত প্রভৃতি ভাষার সৃষ্টি করেছিল। এ জন্যই নাকি সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে য়ুরোপীয় ভাষাগুলির এত মিল!
আর্য বিষয়ক এই নূতন ব্যাখ্যার জন্য একমাত্র মাক্স মূলর-কেই দায়ী করা হয়ে থাকে। আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে মাক্স মূলর-এর যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন মেকলে। মেকলে স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতের সমস্ত মানুষকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করার। ১৮৩৬-এর ১২ অক্টোবরের একটা চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, “It is my belief that if our plans of education are followed up, there will not be a single idolator among the respectable castes in Bengal thirty years hence.” (The Life and Letters of Lord Macaulay by Rt. Hon’ble Sir George Otto Trevelayan, Bart pp. 329-330 from the book Max Müller Exposed, p. 4).
সেই plans of education-এর একটি পরিকল্পনা হল আর্য জাতির আবিষ্কার। Brahma Dutt Bharati লিখিত Max Müller Exposed নামক পুস্তকে প্রকাশিত তাঁর স্ত্রীকে লেখা মাক্স মূলর-এর একটি চিঠিতে তার সামান্য আভাসও আছে— “This edition of mine and the translation of the Veda will hereafter tell to a great extent on the fate of India— it is the root of their religion and to show them what the root is, I feel sure, it is the only way of uprooting all that has sprung from it during the last three thousand years.” (1866). (‘Life and Letters of Friedrich Max Müller’ from Max Müller Exposed, p.11). অর্থাৎ, আমার অনূদিত বেদ ও তার সংস্করণ ভবিষ্যতে ভারতের ভাগ্যকে ব্যাপক ভাবে নির্ধারিত করবে। কারণ এটাই হল তাদের ধর্মের উৎস এবং তাতে রয়েছে তাদের ধর্মের মূল কী। আমি নিশ্চিত বুঝতে পারছি এই হল একমাত্র পদ্ধতি যা তাদের তিন হাজার বছরের সমস্ত ধ্যানধারণাকে নির্মূল করে দেবে।
আর সত্যই কিছুদিন বাদে দেখা গেল যে আমরাই আমাদের প্রাচীন ভারতীয় ধর্ম ও সভ্যতার ইতিহাসকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে দেখা শুরু করেছি। আমরা স্বীকার করে নিলাম ভারতীয় সভ্যতার গৌরব ও বৈশিষ্ট্য এক বিদেশাগত যাযাবর জাতি থেকেই এসেছে। এমনকী হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো আবিষ্কারের পরও সেই ধারণা নির্মূল হল না।
সুহৃদকুমার ভৌমিক রচিত ‘আর্য রহস্য’ পুস্তকের নামপ্রবন্ধ থেকে অংশবিশেষ
(এখানে প্রকাশিত লেখাপত্র শুধুই পড়ার জন্য। দয়া করে এর কোন অংশ কোথাও পুনর্মুদ্রণ করবেন না। ইচ্ছে করলে লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন, কিন্তু অনুরোধ, গোটা লেখাটি কখনওই অন্য কোন ওয়েবসাইটে বা কোন সোশ্যাল নেটওয়রকিং সাইটে শেয়ার করবেন না। ধন্যবাদ।)